গোপালগঞ্জে কারফিউ, থমথমে সড়কে-বাজারে লোকজন কম
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ঘিরে গতকাল বুধবার দিনভর দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর রাত থেকে চলছে কারফিউ। আতঙ্ক-উৎকণ্ঠার রাত পেরিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে থমথমে পরিবেশ।
তবে কারফিউয়ের মধ্যেও সড়কে সড়কে দেখা গেছে মানুষের উপস্থিতি। সংখ্যায় কম হলেও জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া এসব মানুষ বিভিন্ন গন্তব্যে ছুটছেন। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সড়কে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে গতকাল দিনভর দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
আজ সকালে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পড়ে আছে ইটপাটকেল, বাঁশসহ যান চলাচলে নানা প্রতিবন্ধক সামগ্রী। সড়কের পাশে থাকা গাছ কেটে রাস্তার ওপর ফেলেও যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে দেখা গেছে বেশ কিছু স্থানে। আবার সড়ক–মহাসড়কে থাকা বিভিন্ন তোরন ভেঙে ফেলায় রাস্তার ওপর সেগুলো যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
সকাল ৭টায় গোপালগঞ্জ শহরের ঘোনাপাড়া মোড়সংলগ্ন গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের সামনের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর পড়ে থাকা একটি রেইনট্রি গাছ কেটে সরিয়ে নিতে করতে দেখা যায় এক নারীকে। রোজিনা বেগম নামের ওই নারী বলেন, সকালে হাঁটতে বেরিয়ে রাস্তার ওপর গাছটি পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে কেউ হয়তো কেটে রাস্তায় ফেলেছে। তিনি বাদাম বিক্রি করেন। কয়টা ডালপালা কেটে সরাচ্ছেন সংসারের কাজে।
সেখানে রাস্তার একটি সরু অংশ ছাড়া পুরোটাই ওই গাছের কারণে প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। পাশের সরু জায়গা দিয়েই চলছে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন। তবে ভোর থেকেই ঘোনাপাড়া মোড়ে ইজিবাইক মাহিন্দ্রা ও ভ্যান চলতে দেখা গেছে। কম হলেও বিভিন্ন গন্তব্যে এসব যানবাহন চলাচল করছে। তবে স্থানীয় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো কারফিউয়ের কারণে বন্ধ রয়েছে।
সকাল ৮টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। শহরের ঘোনাপাড়া, এলজিইডি মোড়, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, কোট চত্বর, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার ও পুলিশ লাইনস মোড় ঘুরে কোথাও কোনো চেকপোস্ট বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। তবে গোপালগঞ্জ পৌরসভার সামনে কয়েকজন গ্রাম–পুলিশের সদস্য ও পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে বিভিন্ন মোড়ে চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। সেখানে মানুষের জটলা দেখা যায়। কাঁচা বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে বেশ কিছু ফলের দোকানে লোকজন ছিলেন।
এদিকে কারফিউয়ের কারণে স্থানীয়ভাবে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শহরের পুলিশ লাইনস মোড় এলাকার পরিবহনশ্রমিক আজগার আলী শেখ বলেন, ‘কারফিউয়ের কারণে রাস্তায় লোকজন নেই, তাই লোকাল গাড়িগুলো চলছে না। এখান থেকে স্থানীয় দুটি রুটে বাস চলে—গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট ও গোপালগঞ্জ-ব্যাশপুর। এই দুই রুট ছাড়াও গোপালগঞ্জ-কোটালীপাড়া-পয়সারহাট রুটেও বাস চলছে না। তবে ঢাকাসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে স্বাভাবিকভাবেই।’
আমার বার্তা/এমই