মুম্বাইয়ে ট্রেনে বিস্ফোরণ
১৮ বছর জেল খাটার পর ১২ মুসলিমকে বেকসুর খালাস দিলো ভারতীয় আদালত
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ১৩:২৮ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইয়ে ট্রেনে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত ১২ মুসলিম ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে বম্বে হাই কোর্ট। প্রায় ১৮ বছর জেল খাটার পর তাদেরকে খালাস দেন আদালত।
অবশ্য ২০১৫ সালে তাদের পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সোমবার (২১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মুসলিম মিরর।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই মুম্বাইয়ে পশ্চিম রেলপথের লোকাল ট্রেনগুলোতে এই বিস্ফোরণগুলো সংঘটিত হয়। হামলায় প্রাণ হারান ১৮৯ জন, আহত হন অঅরও আট শতাধিক। এই ঘটনার সেসময় ভারতজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই মামলায় আদালত ২০১৫ সালে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও সাতজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু বম্বে হাই কোর্টের দুই বিচারপতি আনিল কিলোর ও শ্যাম চাঁদক বলেন, তদন্তকারী সংস্থা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।
আদালত বলেন, “যথাযথ প্রমাণের ঘাটতির কারণে দণ্ডাদেশ বাতিল করা হলো”। তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়নি।
মামলা যে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তারা হলেন, কামাল আনসারি, মোহাম্মদ ফয়সাল আতাউর রহমান শেখ, এহতেশাম কুতুবউদ্দিন সিদ্দিকি, নাভিদ হুসেন খান, আসিফ খান। আর যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত সাতজন ছিলেন, তানভীর আহমেদ মোহাম্মদ ইব্রাহিম আনসারি, মোহাম্মদ মাজিদ মোহাম্মদ শফি, শেখ মোহাম্মদ আলি আলম শেখ, মোহাম্মদ সাজিদ মারগুব আনসারি, মুজাম্মিল আতাউর রহমান শেখ, সোহেল মাহমুদ শেখ, জমীর আহমেদ লতিফুর রহমান শেখ।
এর বাইরে ওহিদ শেখ নামে এক ব্যক্তি ৯ বছর জেল খাটার পর আগেই খালাস পেয়েছিলেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১৫ সালে বিশেষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা ও রাজ্য সরকার দুই পক্ষই আপিল করে। কিন্তু আপিল শুনানি বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালে এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে মুজাম্মিল শেখ ও জমীর শেখের পক্ষ থেকে আদালতে দাঁড়ান সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ও ওড়িশা হাই কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি ড. এস. মুরলিধর। তিনি আদালতে স্পষ্ট বলেন: “এই মামলা প্রমাণ নয়, জনচাপ ও মিডিয়ার প্রচারে পরিচালিত হয়েছে।”
তদন্তকারী অফিসারদের আচরণ ও স্বীকারোক্তি নেওয়ার পদ্ধতিও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে শুরু থেকেই অভিযুক্তদের দোষী ধরে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “১৮৯ জন হামলায় মারা গিয়েছিলেন। এটা নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক। কিন্তু এরপর যাদের গ্রেপ্তার করা হলো, তারাও তো আরেক ধরনের ভিকটিম হয়ে গেল। এত বছর পরে খালাস পাওয়ার মানে হলো এই মানুষগুলো মূলত নির্দোষ ছিলেন।”
ড. মুরলিধর বলেন, “শুধু অভিযুক্তরাই নয়, তাদের পরিবার ছেলে, মেয়ে, বাবা-মা সকলেই কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন। সমাজ খুব নিষ্ঠুর। একবার কাউকে ‘জঙ্গি’ তকমা দিলে আর কেউ সম্মান দিয়ে দেখে না।”
তিনি আরও বলেন, “যারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তাদের জীবন ফের গুছিয়ে নেওয়ার কোনও উপায় থাকে না। ১৭ বছর কারাগারে থাকার পর কেউ আবার জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে পারবে, এই নিশ্চয়তা কে দেবে?”