শরীয়তপুর জেলার সদরে কর্মরত সাব রেজিস্ট্রার মো. ওমর ফারুক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করে আরাম আয়েশে চাকরি জীবন কাটালেন। তিনি বর্তমানে শরিয়তপুর সদরে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত আছেন। আগামী ১৪ জুন অবসরে যাবেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহারকারী সাব রেজিস্ট্রার ওমর ফারুক।

আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ওমর ফারুক যেখানেই কর্মরত ছিলেন সেখানেই ঘুষখোর হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন। তার অনিয়ম পরিণত হতো নিয়মে। শরিয়তপুরেও তার ব্যত্তয় ঘটেনি। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেছেন। দলিল রেজিস্ট্রি সহ বিভিন্ন ভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে নারী লোভীর অভিযোগও আছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাব রেজিস্ট্রার মো: ওমর ফারুকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১৫ জুন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিলো মাত্র ৬ বছর। ২০০৯ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে ব্যাপক আধিপত্য ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পদায়ন বাগিয়ে নেন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্ষমতাধরদের মধ্যে অন্যতম একজন। মাত্র ৬ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা, এত অল্প বয়সে মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। ২০১০ সালে আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে ১৯০ জন মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীকে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগের লক্ষ্যে একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটি যাচাই-বাছাই করে এই ১৯০ কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৩০ জনকে প্রকৃত মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে তৎকালীন আইন সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে এই কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রায় সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সবাই সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ধানমন্ডি সাব রেজিস্ট্রার অফিসে চাকরি করাকালীন সময়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে ছিলেন ওমর ফারুক। এরপর ২০২২ সালে কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে যোগদানের পর তিনি ঘুষের রাজা হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। অবাধে ঘুষের রাজ্যত্ব কায়েম করা এই সাব রেজিস্ট্রার জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি, নির্ধারিত ফিসের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলন করার জন্য সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, মূল দলিলে গ্রহীতার নাম পরিবর্তন করে দেয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। ওমর ফারুক এর বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগও রয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর যাতে অবসরের টাকা নিতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মহল। শুধু তাই নয়, তদন্ত সাপেক্ষে দুদকে মামলা রুজুর ব্যবস্থাও করা হোক। একজন সাব রেজিস্ট্রার এর আলিশান জীবন যাপন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় পতিত সরকারের পক্ষে নগদ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগও রয়েছে।

২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর শরীয়তপুর সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে বদলী হোন ওমর ফারুক। সেখানে গিয়ে থেমে নেই তিনি। সম্প্রতি একটি অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মাদারীপুর শাখার সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযোগ ছিল, সেবা গ্রহীতাকে জিম্মি করে অবৈধভাবে অর্থ আদায়, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাজস্ব ফাঁকি, নির্ধারিত ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, মূল দলিলের নকল উত্তোলনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি ফি আদায়, টাকার বিনিময়ে মূল দলিলের নকল কপিতে ভুয়া গ্রহীতার নাম লিখে নকল সরবরাহ করা, নকলের সার্টিফায়েড কপি অফিসে জমা না দিয়ে ভুয়া কেস নাম্বার দিয়ে গ্রাহকের নিকট সরবরাহ করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা। কথিত আছে মোটা টাকার বিনিময়ে সামাল দেন ওমর ফারুক।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের একজন তার নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, প্রতি দলিলের ক্ষেত্রে উল্লিখিত জমির মোট মূল্যের ওপর ০.৫ শতাংশ টাকা অফিসকে দিতেই হবে।

সূত্রমতে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে অনেকাংশে দলিলের রেজিস্ট্রি কম। অথচ এরই মধ্যে নকলনবীশ, দলিল লেখকদের সিন্ডিকেটে সাধারণ মানুষ জমির দলিলে অতিরিক্ত খরচ গুনছে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, সাব রেজিস্ট্রার ওমর ফারুক চাকরি জীবনে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঢাকা ও বরিশালে নামে বেনামে করেছেন অঢেল সম্পদ। তিনি সব সময় থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার বিরুদ্ধে দুদক তৎপর বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। আগামী পর্বে ওমর ফারুকের অনেক অজানা তথ্য প্রকাশ করা হবে।

জানতে চাওয়া হলে সাব রেজিস্ট্রার মো: ওমর ফারুক বলেন আমি সহযোগি মুক্তিযোদ্ধা। তাহলে মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করে চাকরি করেছেন কেন প্রশ্ন করা হলে তার কোন সঠিক জবাব দিতে পারেননি।

উল্লেখ্য, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে মো: ওমর ফারুক এক বছর বেশি চাকুরীকাল সময় শেষে আগামী ১৪ জুন অবসর গ্রহন করবেন।

আমার বার্তা/এমই